খুলনা, বাংলাদেশ | ১৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১লা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  বাংলাদেশে শান্তি অত্যন্ত জরুরি, এটা যেন মনে রাখি: প্রধান উপদেষ্টা
  নরসিংদীতে ঈদের দিন ৪ জনকে কুপিয়ে জখম, একজনকে জবাই করার চেষ্টা

৫৩ বছরে যা হয়নি, আগামী ৫ বছরে তাই হোক

কামরুল ইসলাম

১৯৭১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত কত সরকার এলো গেলো, কিন্তু বাঙালি জাতির কোন পরিবর্তন হলো না। এই দায়ভার আমাদের জাতির, নাকি জাতির ভাগ্য বিধাতাদের?

একটি জাতির উন্নতি হয় জাতীয় নেতৃত্বের হাত ধরে। নেতারা জাতিকে যেদিকে নিয়ে যায়, জাতি সেইদিকে ধাবিত হয়। আমরা যে যতই ভাল মানুষের অজুহাতে রাজনীতিকে এড়িয়ে চলি বা ঘৃণা করি তাতে দেশের কোন লাভ নেই। মূলত একটি দেশের মূল চালিকাশক্তি হলো সেই দেশের রাজনীতি। আমরা যতই জনগনকে চালিকাশক্তি বলে বুলি আওড়াই, সেটা মুখেই মানায়। শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর সকল দেশে রাজনীতির নেতারা দেশকে এগিয়ে নেয়। আবার সঠিক নেতৃত্বের অভাবে দেশ পিছিয়ে পড়ে। আমাদের দেশ পিছিয়ে পড়ার কারণও সঠিক নেতৃত্বের অভাব।

বাঙালি জাতি কখনো দক্ষ শাসক ছিল না। এই জাতি আন্দোলন সংগ্রামে ভীষণ পটু, কিন্তু দেশ শাসনে অযোগ্য। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল আন্দোলনের অগ্রভাগে বাঙালির কৃতিত্ব থাকলেও দেশ শাসনে তাদের কোন কৃতিত্ব নেই। ভারতের পশ্চিম বাংলা থেকে আজ পর্যন্ত কোন নেতা ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেনি। অথচ আন্দোলন সংগ্রামে পশ্চিম বাংলা সবার আগে থাকে।

বাংলাদেশের জন্ম থেকে এ পর্যন্ত সকল সরকারের আদ্যোপান্থ আমাদের সকলের জানা। এই দেশে সরকারি দল আর বিরোধী দলের মধ্যে দেশের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা তো দূরের কথা, একে অপরের মুখ দেখাদেখিও হয় না। একদল ক্ষমতায় গেলে আর এক দলকে নিশ্চিহ্ন করতে উঠেপড়ে লাগে। দেশের উন্নয়নের চেয়ে বিরোধী মত দমনে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। রাষ্ট্রের সকল পরিচালিকা শক্তি নিজের মনে করে বিরোধী মতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। নিজের ক্ষমতা আজীবন টিকিয়ে রাথতে পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রকে অন্যের হাতে তুলে দিতেও কুণ্ঠিত হয় না।

এমনি এক ক্রান্তিলগ্নে ৫৩ বছর পরে দেবদূতের মতো নাজিল হলেন ৮৩ বছরের এক যুবক। ছাত্র জনতা তাঁর হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। তিনি তাঁর অবসরকে অবসরে পাঠিয়ে দিয়ে দুরন্ত যুবকের মতো কাজ শুরু করলেন। তিনি সকল দলমতের উর্ধে থেকে সকল নাগরিকদের একই ছাতার নিচে ঐক্যমতের আহবান জানালেন। প্রথম প্রথম তাঁর আহবানে সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ ছাড়া অধিকাংশ দল ও সাধারণ মানুষ ইতিবাচক সাড়া দিলেও কয়েক মাস পর বাঙালির চিরাচরিত স্বভাব ফুটে উঠলো। দলীয় নেতারা তলে তলে আঁতাত করে ড. ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধাচারণ শুরু করেছে। তাঁকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে শুরু করলো অপপ্রচার ও আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে। সাথে যোগ দিলো বন্ধুবেশি স্বঘোষিত সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের সরকার। বিপ্লবী ছাত্র সংগঠনের কিছু কিছু ছাত্র ভুল করতেও ভুল করলো না। সবকিছু মিলে ড. ইউনূস প্রাথমিক ধাক্কা সামলাতে মারাত্মক হিমসিম খেলেন। কিন্তু সাধারণ জনগনের সমর্থন নিয়ে সার্বিক অবস্থার মোকাবেলা করে চলেছেন ড. ইউনূস।

বৈশ্বিক রাজনীতিতে ড. ইউনূস এখনো টিকে আছেন। একের পর এক বিশ্ব নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ করে তিনি দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্বের ১৪০ দেশের সমর্থন নিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের পথ খুঁজে বের করছেন। ভারতের গণমাধ্যমের মুখ চেপে ধরে প্রাথমিক চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। এবারের রোজায় দ্রব্য মূল্যের কারসাজি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন।

শতকোটি বাধার পরেও ড. ইউনূসের এই কয় মাসের সাফল্যের একটি ছোট্ট পরিসংখ্যান এখানে তুলে ধরলাম।

ড.ইউনূস যখন আজকেই পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু চীন সফরে পাশ করলেনঃ
★ ১৫ হাজার কোটি টাকার বিশ্বমানের মেডিকেল প্রতিষ্ঠা।
★ ১২ হাজার কোটি টাকার চারটি মহাসাগরীয় বাণিজ্য জাহাজ ক্রয়।
★ ১০ হাজার কোটি টাকার তিস্তা ব্যারেজ তৈরি।
★ বিনা শুল্কে ২০২৮ সাল পর্যন্ত মুক্ত পণ্য বাণিজ্য।
★ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির ১ ট্রিলিয়ন ডলারের চুক্তি হতে যাচ্ছে।

তখনি
পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে খবর এলো….
★ বাংলাদেশের সবথেকে বড় সমস্যা জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রস্তাব পাস হয়েছে ১৪০ দেশের প্রত্যক্ষ ভোটে। যেখানে কোন দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়নি। রোহিঙ্গাদের আগে যেখানে খাবার বাবদ মাসিক সাত ডলার তথা ৮৪৭টাকা দেওয়া হতো। নতুন বাজেটে সেটি বাড়িয়ে এখন থেকে জনপ্রতি খাবারে ১২ ডলার তথা ১৪৫২ টাকা দেওয়া হবে।

★এখানেই শেষ নয়, ফেডারেল থেকে খরব এলো, দীর্ঘ একযুগ পর বাংলাদেশের রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার। শুধু এমাসে দেশে এসেছে ৪ বিলিয়ন ডলার তথা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা……

অনেকে হয়তো বলবেন, চীন সফরের পর আমাদের দেশের পূর্ববর্তী সরকারের পতন নিশ্চিত হয়েছিল। এমনকি বিশ্বের আরো অনেক দেশের সরকার প্রধানের পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল চীন সফরের পর। কিন্তু ড. ইউনূসের চীন সফরের পর ঐসব কাহিনী পুরাপুরি ভুল প্রমাণিত হোক। আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে এই দোয়া করি।

আমাদের দেশের সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। বাঙালির চিরাচরিত বদনাম ঘুচে যাক। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সমগ্র বিশ্বে বাঙালির আসন সমুন্নত হোক।

(লেখক : সা‌বেক পু‌লিশ কর্মকর্তা)

খুলনা গেজেট/এএজে




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!